কাঠালিয়া প্রতিনিধি ॥ সহকারী কমিশনার (ভূমি)’র ঘুষের টাকা চারটি ব্যাংকে লেনদেন ও অতিসম্প্রতি নানান অনিয়মের তথ্য ফাঁস হওয়ায় গোটা বরিশালজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় গৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোজুড়ে চলছে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড়। সূত্রমতে, বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠির কাঠালিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমিত সাহা বেসরকারি চারটি ব্যাংকের মাধ্যমে নিকট আত্মীয়, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ঘুষের টাকা জমা করে আসছেন। অতিসম্প্রতি ভ্রাম্যমান আদালতের ভয় দেখিয়ে ঘুষ গ্রহণের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় গৃষ্টি হলে জেলা প্রশাসক এসিল্যান্ড সুমিত সাহা ও নাজির মাইনুলকে শোকজ করেছেন। ঘটনার তিনদিন পর গত ২৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক মোঃ জোহর আলীর স্বাক্ষরিত তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ শোকজের জবাব দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক অফিসের স্মারক নং ৩১.১০.৪২০০.০১২.০৪.০২৬.১৮-১০১, তারিখঃ ২৮ জানুয়ারি ২০২১ কারণ দর্শানো নোটিশে উল্লেখ রয়েছে মোবাইল কোর্টকে যেমনি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, তেমনি প্রশাসন ক্যাডারের ভাবমূর্তিও ভীষণভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। আপনি এর দায়ভার কোনো ভাবেই এড়াতে পারেন না। আপনার এহেন কর্মকাণ্ড সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ২ (খ) অনুযায়ী অসদাচরণের সামিল। এমতাবস্থায় আপনার এহেন কর্মকান্ডের জন্য কেন আপনার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে সুপারিশ করা হবেনা তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা তিন কার্যদিবসের মধ্যে ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলো। সূত্রমতে, দীর্ঘ ২২ বছর পর গত ৮ অক্টোবর ২০২০ তারিখে সুমিত সাহা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে কাঠালিয়া উপজেলায় যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে তিনি ভূমি অফিস ঘুষের আখড়ায় পরিনত করেছেন। এসিল্যান্ড সুমিত সাহা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, জমির নামজারী, সই মোহর পর্চা, জলাশয় সংস্কার (খাল ও পুকুর) প্রকল্প থেকে, গাছ বিক্রিসহ ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ ও ফাইল থেকে ঘুষ গ্রহণ করে থাকেন। মশাবুমিয়া গ্রামের এক জনৈক ব্যক্তি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সুমিত সাহার ঘুষ বাণিজ্যের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে প্রতিকার চেয়ে সচিব বরাবরে গত ৩১ জানুয়ারি একটি আবেদন করেন। সূত্রে আরও জানা গেছে, সুমিত সাহার ভাই রবিন সাহার ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের হিসাব নম্বর-০১৫২০৫০০২৫৩৭৪ এ গত ২৪ জানুয়ারি এক লাখ টাকা জমা করা হয়েছে। একইদিন অন্য এক নিকট আত্মীয় সিবানী সাহার যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের হিসাব নম্বর-০০৮৭০৩১০০০৮৬১৯ এ দুই লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে। এসিল্যান্ডের নিজ অ্যাকাউন্ট ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের হিসাব নং ১১৮১০৫৫৫৩২৮০০ এ গত ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ ত্রিশ হাজার, ৩১ ডিসেম্বর চল্লিশ হাজার ও ১০ ডিসেম্বর পঞ্চাশ হাজার টাকা জমা করেন। এ ছাড়া গত ২১ ডিসেম্বর ২০২০ ব্র্যাক ব্যাংকের ১৫০৩২০৩৬২৯৪২৪০০ হিসাব নম্বরে এক লাখ পনের হাজার টাকা জমা হয়েছে। যাহার রিসিভ নম্বর ৪০৪৩২৯২৬৪৩৫৫। সুমিত সাহা নাজ প্রোপারির্টিজ লিমিটেডের, ব্র্যাক ব্যাংকের হিসাব নম্বর-১৫০৩২০৩৬২৯৪২৪০০১ এ প্রতি মাসে টাকা জমা করে থাকেন। আর কাঠালিয়া থেকে আদায়কৃত এসব ঘুষের টাকা তার অ্যাকাউন্ট থেকে তার নিকট আত্মীয়দের একাউন্টে জমা করে দিতেন নাজির মাঈনুল। উল্লেখ্য, গত ২৫ জানুয়ারি দুপুরে কাঠালিয়ার মেসার্স ত্বহা ব্রিকস ফিল্ডে এসিল্যান্ড সুমিত সাহা তার অফিসের নাজির মাঈনুলসহ অন্যান্য কর্মচারী, পুলিশ ও দমকল বাহিনীর সদস্য নিয়ে অভিযান চালায়। এ সময় নানা অভিযোগ তুলে ইট ভাটার পার্টনার (মালিক) মোঃ শাহিন আকনের কাছে দশ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ক্ষুদ্ধ হয়ে ভাটার মূল মালিক মোঃ এনামুল হকের শ্বশুর হাবিবুর রহমান ও কর্মচারী মফিজুলকে আটক করে নিজ কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে পার্টনার (মালিক) শাহিন আকন প্রথমে দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা কাঠালিয়াস্থ এসিল্যান্ড সুমিত সাহার অফিসে গিয়ে দিয়ে আসেন। টাকা কম হওয়ায় সে আরও ক্ষিপ্ত হয়। পরে শাহিন এসিল্যান্ডের কাছ থেকে এক ঘন্টা সময় নিয়ে আবার বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়ে এসে মোট চার লাখ টাকা সুমিত সাহাকে পৌছে দেন। এ সময় নাজির মাঈনুল উপস্থিত ছিলেন। টাকা পাওয়ার পরে আটকৃত দুইজনকে ছেড়ে দেয়া হয়। টাকার রশিদ চাওয়া হলে সুমিত সাহার স্বাক্ষরিত মামলার (নম্বর ০৫/২০২১ইং) আদেশে (ক্রমিক নং ৪৮০৮২৩) এর দুই লাখ টাকার একটি রশিদ ধরিয়ে দেয়া হয়। অন্য দুই লাখ টাকা কথা জানতে চাইলে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ হুমকি প্রদর্শন করে অফিস থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়।
Leave a Reply